haibatnagarhaveli.org এর উদ্দেশ্য
১৮৭৪ সনে ঢাকার সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজ হয়বতনগর ও জঙ্গলবাড়ি হাভেলির মেহমান হয়ে এসেছিলেন। ওয়াইজ পুর্ব বংগের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য পরে বিখ্যাত হয়েছিলেন। জঙ্গলবাড়িতে তাকে অভ্যর্থনা জানান দেওয়ান সোবহান দাদ খান। ওয়াইজের পরামর্শে সোবাহান দাদ খান হয়বতনগর, জঙ্গলবাড়ি তথা ঈসা খানের উত্তরপুরুষদের ইতিহাস পুস্তক আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় জঙ্গলবাড়ি এস্টেটের ম্যানেজার মুন্সি রাজচন্দ্র ঘোষ ও হয়বতনগর এস্টেটের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইদ্রিসকে। প্রসঙ্গত হয়বতনগরের দেওয়ানদের তখন পুরুষ উত্তরাধীকারি ছিলো না। দেওয়ান খোদা নেওয়াজ খান ১৮৫৯ সনে ঢাকায় ও দেওয়ান এলাহি নেওয়াজ খান ১৮৭২ সনে কলকাতায় মৃত্যুবরন করেন। দেওয়ান খোদা নেওয়াজ খানের কন্যা রওশন আক্তার ও এলাহি নেওয়াজ খানের দুই কন্যা জামিলা ও আয়েশা আক্তার খাতুন সম্পুর্ণ জমিদারীর মালিক ছিলেন। এলাহি নেওয়াজ খানের অংশের জমিদারী পরিচালনা করতেন জামিলা খাতুনের স্বামী দাউদপুর পরগনার জমিদার সৈয়দ আবদুল্লাহ(পরবর্তীতে সোবহান দাদ খানের কন্যার স্বামী)। সোবাহান দাদ খানের দিকনির্দেশনায় রাজচন্দ্র ঘোষ ও জঙ্গলবাড়ি স্কুলের হেড পন্ডিত কালীকুমার চক্রবর্তী হয়বতনগর ও জঙ্গলবাড়ির স্টেট আর্কাইভ থেকে পুরনো দলিলপত্র, বংশতালিকা ঘেঁটে বিক্ষিপভাবে থাকা তথ্যগুলোকে সন্নিবেশিত করেন। চারশত বছর ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্যকে একত্র করা অনেক দুরহ ব্যাপার ছিলো। অনেক গুরুত্বপূর্ন কাগজ আর্দ্র আবহাওয়ায় নস্ট হয়ে গিয়েছিলো। আবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নিজেরাই নস্ট করেছিলেন বলে জানা যায়। যেমন হয়বত খানের উত্তরপুরুষ দেওয়ান শাহনেওয়াজ খান( মৃত্যু ১৮৪০) একজন ধর্মীয় ব্যক্তির পরামর্শে(বংশধরদের মতে মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী) সিন্ধুকভর্তি পারিবারিক দলিল, সনদ ও অনেক মূল্যবান সামগ্রী নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেন। তিনি পূর্বপুরুষের গৌরবের অহমিকা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে কাজটি করেছিলেন। দীনেশ চন্দ্র সেনও এ ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন কিন্তু তার বর্ননায় শাহনেওয়াজ খান পূর্বপুরুষদের সাপেক্ষে নিজের ক্ষুদ্রত্ব অনুভব করে খেয়ালের বশে নরসুন্দায় সিন্ধুক নিক্ষেপ করেন। যেভাবেই ঘটে থাকুক এতে করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পূর্বে উল্লেখিত লেখকদের সংগ্রহের বাইরে থেকে যায়।
তবে প্রতিকুলতা সত্তেও দেওয়ান সাহেবগন তাদের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। সোবাহান দাদ খানের অকাল মৃত্যুতে কাজটি কিছুকাল স্থবির ছিলো কিন্তু তার ছোট ভাই আজিম দাদ খানের প্রচেষ্ঠায় তা পুনরায় জীবন পায়। লেখকগন আরো তথ্যের জন্য সময় নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ঢাকা বিভাগের কমিশনার মিস্টার লুইস ও ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর, সি দত্তের তাড়াতে অবশেষে একপ্রকার অসম্পুর্ণভাবেই ১৮৯২ সনে ঢাকা থেকে “মসনদে আলার ইতিহাস” বইটি প্রকাশিত হয়।
বইটি অসম্পুর্ন হলেও ঈসা খানের বংশধরদের সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় যার অনেকাংশ জুড়ে ছিলো হয়বত খানের উত্তরসুরীদের কথা। জেমস ওয়াইজ, স্টেপলটন, দীনেশ চন্দ্র সেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালী ইত্যাদি গবেষক এ বইটি থেকে অনেক তথ্যের সংগ্রহ করেছেন।
উপরের আলোচনায় এটি স্পষ্ট যে ঈসা খান-হয়বত খানের পরিবার সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতিহাসবিদদের অজানা থেকে গেছে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বংশধরদের ধারণ করা স্মৃতি, বয়ান, মূল্যবান সামগ্রী ইত্যাদির তথ্যসংগ্রহ করে সাধ্যনুযায়ী অতীত পুনঃনির্মাণের চেষ্টা করাই haibatnagarhaveli.org এর লক্ষ্য।