Skip to content

হয়বত খানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

দেওয়ান হয়বত মুহাম্মদ খান ছিলেন মুঘল যুগে পূর্ব বাংলার একজন বিখ্যাত জমিদার,নওয়ারা জায়গিরদার, হিস্যাজাতদারভাটির নওয়ারার(নৌবাহিনী) প্রধান
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে সুবা বাংলার রাজধানী জাহাঙ্গীরনগর সংলগ্ন সোনারগাঁও(ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ), কর্তুবা(ঢাকা), মহেশ্বরদি(নরসিংদী,গাজিপুর, কিশোরগঞ্জ), বরদাখাত(কুমিল্লা,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,কিশোরগঞ্জ) ইত্যাদিসহ ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পরগনার জমিদার/জায়গিরদার ছিলেন। তার জমিদারীর অঞ্চলটি সর্বোতকৃষ্ট মসলিন  উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিলো। এটি ছিলো তৎকালীন বাংলার সমৃদ্ধি ও বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। ঈসা খানের উত্তরসুরীদের ঐতিহ্য অনুযায়ী দেওয়ান হয়বত খান মসলিন উৎপাদনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তার নওয়ারার মাধ্যমে কৌশলগত ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্রহ্মপুত্র-শীতলক্ষ্যা-মেঘনা অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রদান করতেন। সুবে বাংলার নৌবাহিনীর সম্পর্কিত একমাত্র ফরমানটি ব্রিটিশযুগে পাওয়া যায়, যেটি সুবাদার ও মুঘল শাহজাদা আজিম-উশ-শান হয়বত খানের প্রতি প্রেরণ করেন ।  
    
হয়বত খানের পিতার নাম হায়াত মুহাম্মদ খান। হায়াত খানের পিতার নাম
এওয়াজ মুহাম্মদ খান। এওয়াজ মুহাম্মদ খানের পিতা মুহাম্মদ খান, মসনদ-এ-আলা ঈসা খানের পুত্র ও মুসা খানের ভাই। ঈসা খানের মাধ্যমে দেওয়ান হয়বত খান, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহসুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের বংশধর। 

হয়বত খান বিয়ে করেন তার জ্ঞাতি বিখ্যাত দেওয়ান মনওয়ার খানের জ্যৈষ্ঠপুত্র শরিফ খানের কন্যা ফাতিমা খাতুনকে। সরাইলের দেওয়ান নাসির মাহমুদ (নাসিরনগর)  ফাতিমা খাতুনের নানা।

হয়বত খান আনুমানিক ১৬৯০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে জোয়ার হোসেনপুর পরগণায় নিজের হাভেলী ও হয়বতনগর  প্রতিষ্ঠা করেন।  

হয়বত খানের
এক পুত্র ও একজন কন্যার কথা জানা যায়। পুত্র দেওয়ান আবদুল্লাহ খান পিতার ৭টি পরগনা  ও কন্যা ৩ টি পরগনার মালিকানা লাভ করেন।

দেওয়ান আব্দুল্লাহ খান, নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমসাময়িক ও মিত্র ছিলেন।  পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর নবাবের পক্ষ অবলম্বন করায় লর্ড ক্লাইভ তার প্রতি রুষ্ট হন ও কয়েকটি পরগনার স্বত্ব করে নেন। বর্তমান হয়বতনগর হাভেলির সকলেই আব্দুল্লাহের বংশধর। তার বংশধরেরা ১৯৫০ সনে জমিদারী বিলুপ্তির আগপর্যন্ত আব্দুল্লাহ খানের বাকি পরগণাগুলোর জমিদার ছিলেন।   

হয়বত খানের কন্যার নামটি বর্তমানে বিস্মৃত। যতটুকু জানা যায় তার বিয়ে হয়েছিলো চট্টগ্রামের প্রশাসকজমিদার মীর্জা আগা বাকেরের পুত্র মীর্জা আগা সাদেকের সাথে। এই পরিবারটি তৎকালীন সুবে বাংলার রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলো। আগা সাদেকের নানা ২য় মুর্শিদ কুলি খান(লুতফুল্লাহ তাব্রেজি) বাংলা ও উড়িষ্যার নায়েব নাজিম এবং বাংলার নবাবীর দাবিদার ছিলেন। তিনি নবাব আলীবর্দির সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন। মাতৃকুলে আগা সাদেকের প্রপিতামহ বাংলার ২য় স্বাধীন নবাব সুজাউদ্দিন খানপ্রপ্রপিতামহ ১ম স্বাধীন নবাব মুর্শিদকুলী খানবাকেরগঞ্জ(বর্তমান বরিশাল) জেলা ও ‘বাকরখানি’ নামের সুস্বাদু খাবারটির সাথে আগা বাকেরের নাম জড়িয়ে আছে। আগা সাদেক ও হয়বত খানের কন্যা দম্পতির তিন পুত্র  মীর্জা ইব্রাহিম, মীর্জা আবুল হোসেন, মীর্জা জাফর।   

স্বাধীন বাঙলার সুলতান ও মসনদ-এ-আলার যুগপৎ বংশধর ও ঐতিহ্যের ধারক এ পরিবারটি বর্তমানে দেশবিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো হাভিলিতে বসবাস করছেন।