Skip to content

 

                         
হয়বতনগর হাভেলি
                                       
বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক মসনদ-এ-আলা ঈসা খানের
উত্তরপুরুষ দেওয়ান হয়বত মুহাম্মদ খান(সংক্ষেপে হয়বত খান) সোনারগাঁ থেকে আনুমানিক ১৬৯০-১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ‘জোয়ার হোসেনপুর’ পরগণায় নরসুন্দা নদীর তীরে তার নওয়ারা(নৌবাহিনী) দপ্তর স্থাপন করেন। একটি উপযুক্ত স্থান বেছে নিজের হাভেলি নির্মান করেন। তার নাম অনুসারে অঞ্চলের নামকরণ হয়
হয়বতনগর। হয়বত খানের পুত্র আবদুল্লাহ খান হাভেলি সংলগ্ন অঞ্চলটিকে খাস তালুক “তালুক খামার” নামে মূল জমিদারি থেকে পৃথক করেন যা শুধু তার পরিবার ও কর্মচারীদের(চাকরান) প্রয়োজনে ব্যবহার হতো। বর্তমান কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভার আখড়া বাজার ব্রিজ থেকে শুরু করে শহরের পশ্চিম প্রান্ত এই তালুকের অন্তর্গত ছিলো। 

পুর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়বত খানের পরিবার একটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ঐতিহ্যের ধারক বিধায় এ পরিবারিক হাভেলিটি গুরুত্বপুর্ণ ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের(১৪৯৪-১৫১৯) ময়মনসিংহ বিজয়ের পর থেকে তার নামানুসারে জোয়ার হোসেনপুর পরগনায় ক্রমানুসারে সুলতানের দুই পুত্র, প্রপৌত্র ঈসা খান, ঈসা খানের অধস্তন হায়াত খান, তার পুত্র হয়বত খানের বংশধরগণ ১৯৫০ সন অবধি সুলতান থেকে মসনদ-এ-আলা অতঃপর মনসবদার, জায়গীরদার ও জমিদার হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকে এ অঞ্চল শাসন করেছেন এবং আনুমানিক ১৭০০ সাল থেকে  হয়বতনগর হাভেলিতে বসবাস করে এসেছেন।

হয়বতনগর হাভেলি বর্তমানে হয়বতনগর জমিদার বাড়ি, দেওয়ান বাড়ি বা সাহেব বাড়ি নামে অভিহিত হচ্ছে। হাভেলি সংলগ্ন মোড়টি “হাউলির মোড়” নামেও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। উল্লেখ্য ১৮৪০ সাল অবধি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা অঞ্চলটির প্রশাসনিক নাম ছিলো হয়বতনগর যা ১৭৭৬ সনে জেমস র‍্যানেলের ম্যাপে দেখা যায়। হয়বত খানের নৌঘাঁটি একটি থানা হিসেবে মুঘল,নবাবি ও কোম্পানি আমলে হয়বতনগরেই অবস্থিত ছিলো। সমগ্র কিশোরগঞ্জ জেলায় হয়বতনগর ও বাজিতপুরে দু’টি থানা ছিলো। ১৮৪০ সনে বত্রিশে ‘কিশোরগঞ্জ’ নামে একটি সমৃদ্ধ বাজার তৈরি হওয়ায় ঐ থানাটি কিশোরগঞ্জ বাজারে স্থাপন করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে থানাসংলগ্ন বাজারের নামে ১৮৬০ সনে কিশোরগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়।